Skip to content
Home » MT Articles » বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। বাতাবি লেবুর চাষ পদ্ধতি।

বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। বাতাবি লেবুর চাষ পদ্ধতি।

বাতাবি লেবু

বাতাবি লেবু

বাতাবি লেবু, যাকে জাম্বুরা, পমেলো বা শ্যাডকও বলা হয়, একটি সাইট্রাস ফল যা এর বড় আকারের জন্য পরিচিত।  বাতাবি লেবুর ইংরেজি নাম Grape fruit।এটি একটি গোলাকার ফল যা 10 থেকে 15 ইঞ্চি (25 থেকে 38 সেমি) ব্যাস পর্যন্ত হতে পারে। এ লেবুর খোসা পাতলা এবং মসৃণ হয় এবং এর ভিতর সাদা বা গোলাপী রঙের রসালো মাংস থাকে। এই লেবুর স্বাদ মিষ্টি এবং টক।বাতাবি লেবু খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এটি তাজা, জলখাবার বা স্ন্যাক হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। এটি জুস, সালাদ বা মিষ্টান্নে যোগ করা যেতে পারে।

বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুণ

বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুণ:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালোরি92
কার্বোহাইড্রেট22.8 গ্রাম
প্রোটিন1.6 গ্রাম
ফ্যাট0.2 গ্রাম
ফাইবার3.1 গ্রাম
ভিটামিন সি62.9 মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ60 মাইক্রোগ্রাম
পটাসিয়াম392 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম28 মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম45 মিলিগ্রাম
আয়রন0.3 মিলিগ্রাম

বাতাবি লেবুর চাষ পদ্ধতি:

এ লেবুর চাষ পদ্ধতি

বাতাবি লেবু একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। বাতাবি লেবুর চাষের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে:

জলবায়ু:

বাতাবি লেবু উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। গড় তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেন্টিমিটার থাকা উচিত।

মাটি:

এই ফলের চাষের জন্য সুনিষ্কাশিত, উর্বর, দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। মাটির pH ৬.০-৭.০ হওয়া উচিত।

জাত:

বিভিন্ন জাত রয়েছে বাতাবি লেবুর। বাংলাদেশে বারি মাল্টা ১, বারি মাল্টা ২, বারি মাল্টা ৩, বারি মাল্টা ৪ ইত্যাদি জাতগুলি জনপ্রিয়।

চারা:

এই ফলের চারা কলম, বীজ বা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে। কলম থেকে তৈরি চারা সবচেয়ে ভালো।

রোপণ:

এ ফলের চারা বর্ষা মৌসুমে রোপণ করা হয়। গর্তের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা ৭৫x৭৫x৭৫ সেমি হওয়া উচিত। প্রতি গর্তে ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫ কেজি ছাই, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ৫ গ্রাম বরিক এসিড এবং ৫০০ গ্রাম চুন দিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। চারা রোপণের পরপরই পানি দিতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা:

এ ফল চাষে বছরে তিনবার সার দিতে হয়। প্রথম সার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে, দ্বিতীয় সার গ্রীষ্মকালে এবং তৃতীয় সার শীতকালে দিতে হয়। প্রতিবারে প্রতি গাছে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ১৫০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হয়।

সেচ:

নিয়মিত সেচ দিতে হয় বাতাবি লেবুর চাষে। বিশেষ করে ফুল ফোটার সময় এবং ফল ধরার সময় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হয়।

আগাছা দমন:

বাতাবি লেবুর চাষে আগাছা দমন করা জরুরি। আগাছা গাছের পুষ্টি উপাদান এবং পানি শোষণ করে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন:

বাতাবি লেবু বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হতে পারে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ফল সংগ্রহ:

এটি সাধারণত ফুল ফোটার ৩-৪ মাস পর পাকে। ফল পাকার সময় হলুদ বা কমলা রঙের হয়ে যায়। ফল পাকলে গাছ থেকে সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে বাজারে বিক্রি করা হয়।

বাতাবি লেবু চাষের কিছু সুবিধা:

  • এটি একটি লাভজনক ফসল।
  • এ লেবু চাষের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না।
  • ইহা চাষের জন্য বেশি জমি প্রয়োজন হয় না।

বাতাবি লেবু চাষের কিছু অসুবিধা:

  • বাতাবি লেবু বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হতে পারে।
  • বাতাবি লেবুর বাজার মূল্য মৌসুমের উপর নির্ভর করে।

বাতাবি লেবুর ‌উপকারিতা:

এ ফলের ‌উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: 

বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরকে শক্তিশালী করে।

আরোও পড়ুন

তালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। তাল ফল কেন খাবেন?

ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি: 

বাতাবি লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বককে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং বলিরেখা এবং বয়সের দাগ কমাতে সাহায্য করে।

হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি: 

এতে উপস্থিত ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। ফাইবার পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে খাবারের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

হার্ট স্বাস্থ্যের উন্নতি: 

এই ফলে উপস্থিত পটাসিয়াম হার্ট স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: 

এ লেবুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে বাধা দিতে পারে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

এই লেবুতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বাতাবি লেবু এর অপকারিতা:

বাতাবি লেবু এর অপকারিতা

বাতাবি লেবু একটি সাধারণ ফল যা সাধারণত নিরাপদ। তবে, কিছু লোকের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব হতে পারে, যেমন:

  • অ্যাসিডিটি: সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে বাতাবি লেবুতে, যা কিছু লোকের মধ্যে অ্যাসিডিটি বা পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • চোখের জ্বালা: এ লেবুর রস চোখের জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অ্যালার্জি: এ লেবুতে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ফোলাভাব এবং শ্বাসকষ্ট

বাতাবি লেবুর অপকারিতাগুলি সাধারণত হালকা এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। তবে, যদি আপনার কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা সাহায্য নিন।

সম্পর্কিত:

লবঙ্গ কি? লবঙ্গের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 4, 2023

তিলের তেল: তিলের তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম।

March 20, 2025

লেটুস পাতা: পুষ্টির ভান্ডার।

January 26, 2025

ওলকপির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

August 31, 2023

কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। কাঁকরোল রেসিপি, চাষ পদ্ধতি।

September 20, 2023

মুলো শাক:মুলো শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

November 5, 2024

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। সজনে পাতা গুড়া তৈরি ও খাওয়ার নিয়ম।

April 18, 2024

শিমের বিচির পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা ও অপকারিতা।

June 20, 2024

মূলার পুষ্টিগুণ,উপকারিতা ও অপকারিতা। মূলা কেন খাবেন?

September 5, 2023

করলা কি? করলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 9, 2023
error: Content is protected !!