Skip to content
Home » MT Articles » বেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। বেলের শরবত কেন খাবেন?

বেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। বেলের শরবত কেন খাবেন?

বেলের উপকারিতা

 বেল

পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল হলো বেল। সেই সঙ্গে এতে আছে নানান ঔষধি গুণ, যা আমাদের দেহের অনেক উপকার করে থাকে। বেলের ইংরেজি Bell. এটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে, যেমন কাঁচা, রান্না করা, বা জুস হিসেবে। প্রাচীন সময় থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শরীরের জন্য উপকারী হিসেবে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে এ ফলটি।বিভিন্ন উপকারী গুণের পাশাপাশি গরমে ঠান্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই আপনাকে প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তাই গরমের এই সময়টায় সকালের শুরুটা বেলের শরবতকে সঙ্গী করে নিতে পারেন।শীতের শেষ ও গরমের শুরুতে আবহাওয়ার পরিবর্তন খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব ফেলে শরীরে। আর তার জেরে ছোট থেকে বড় অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। বেলের শরবত শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বেলের রয়েছে হাজারো গুণ। 

বেলের পুষ্টিগুণ

বেলের পুষ্টিগুণ:

বেল একটি পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম বেলের শাঁসে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:

  • ক্যালোরি: ৬২
  • প্রোটিন: ১.৮ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ২৮.১ গ্রাম
  • চিনি: ১৭.৭ গ্রাম
  • ফাইবার: ৩.১ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ৮-৬০ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ: ৩২০ আইইউ
  • পটাসিয়াম: ৪০০ মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: ৬০ মিলিগ্রাম
  • আয়রন: ১ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: ১৫ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস: ৪০ মিলিগ্রাম
  • জিঙ্ক: ০.৪ মিলিগ্রাম

বেল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন এ-এরও একটি ভালো উৎস, যা দৃষ্টিশক্তি, ত্বক, এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেল ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়ামেরও একটি ভালো উৎস, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আয়রনেরও একটি ভালো উৎস, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

বেলের উপকারিতা:

বেলের শরবতও বেশ উপকারি

১. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বেল:

নিয়মিত বেল খেলে এর ল্যাকোটিভগুণ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা ছাড়ও মুখের ব্রণ দূর করে ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। টানা ৩ মাস যদি আপনি নিয়মিত বেল খান, তাহলে আপনি সহজেই মুক্তি পেতে পারেন এই সমস্যা থেকে।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেল:

বেল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৩. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে বেল:

বেল ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস, যা দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ রেটিনায় রঙ্গক তৈরি করতে সাহায্য করে, যা দৃষ্টিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয়।

৮. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বেল:

বেল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৫. চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে বেল:

বেল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

৬. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে বেল:

বেল ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়ামেরও একটি ভালো উৎস, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি এবং ঘনত্বের জন্য প্রয়োজনীয়। পটাসিয়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।

৭. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে বেল:

বেল আয়রনেরও একটি ভালো উৎস, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আয়রন রক্তের লাল কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন পরিবহন করে।

আরোও পড়ুন

আমড়া খাওয়ার ৯ টি উপকারিতা।আমড়ার পুষ্টিগুণ।

৮. ক্যান্সার প্রতিরোধী শক্তি বাড়াতে বেল:

বেলে রয়েছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। নিয়মিত বেল খেলে শরীর ক্যান্সার প্রতিরোধী শক্তি বেড়ে যায়।

৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেল:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে বেল। পাকা বেলে আছে মেথানল নামের একটি উপাদান, যা ব্লাড সুগার কমাতে অনবদ্য কাজ করে। তবে শরবত করে নয়, বেল খেতে হবে এমনিই।

১০. আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে বেল:

শরীরের হাড়ে কিংবা মাংসে ব্যাথা ছাড়া এখন খুব কম মানুষই আছেন। আর্থ্রাইটিসের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও বেলকে সঙ্গী করে নিতে পারেন।

১১. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেল:

ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়ার কারণে চিন্তায় রয়েছেন? এ সময় বেল খেলে দূর হবে এই সমস্যা? চিকিৎসকরা বলছেন, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেল খুব উপকারী।

বেলের অপকারিতা:

বেলের অপকারিতা

বেল একটি পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তবে, বেলের কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও রয়েছে।

  • অ্যালার্জি: বেল কিছু লোকের অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট, এবং মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া।
  • গ্যাস এবং ফোলাভাব: বেল ফাইবার সমৃদ্ধ, যা গ্যাস এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি: বেলতে চিনি এবং ক্যালোরি রয়েছে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা: বেলতে চিনি রয়েছে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

বেলের অপকারিতাগুলি সাধারণত সামান্য এবং গুরুতর নয়। তবে, যদি আপনি বেল খাওয়ার পরে কোনও অপ্রত্যাশিত লক্ষণ অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বেল খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:

  • আপনি যদি বেলের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন তবে এটি এড়িয়ে চলুন।
  • আপনি যদি গ্যাস বা ফোলাভাব অনুভব করেন তবে বেলের পরিমাণ সীমিত করুন।
  • আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন তবে বেল সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

বেল একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে, এটি খাওয়ার সময় উপরের বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

error: Content is protected !!