Skip to content
Home » MT Articles » চেলা মাছ: চেলা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, বৈশিষ্ট্য ও রেসিপি।

চেলা মাছ: চেলা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, বৈশিষ্ট্য ও রেসিপি।

চেলা মাছ

চেলা মাছ:

চেলা মাছ দক্ষিণ এশিয়ার একটি বহুল পরিচিত ছোট আকারের স্বাদুপানির মাছ। এটি Cyprinidae পরিবারভুক্ত, যা কার্প বা মিনnows (ছোট মাছ) পরিবারের একটি অংশ। লাউবুকা মাছের সাথে চেলা মাছের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির চেলা মাছ দেখা যায়, যেমন রূপালী চেলা (Salmophasia acinaces), ফুলচেলা (Salmophasia phulo) এবং ঘোড়া চেলা (Securicula gora)।

চেলা মাছ এর শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য:

চেলা মাছের দেহ সাধারণত লম্বাটে ও চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। এদের শরীর উজ্জ্বল রূপালী রঙের হয়, তবে দেহের উপরের অংশ কিছুটা সবুজাভ বা হালকা ধূসর বর্ণের হতে পারে। এদের মুখ কিছুটা উপরের দিকে বাঁকানো থাকে এবং নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে সামান্য লম্বা হয়। প্রজাতির ভিন্নতা অনুসারে এদের আকারে কিছু পার্থক্য দেখা যায়।

চেলা মাছের পুষ্টিগুণ:

চেলা মাছের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে আনুমানিক)

পুষ্টি উপাদানতাজা চেলা মাছ (আনুমানিক মান)চেলা মাছের শুঁটকি (আনুমানিক মান)একক
জলীয় অংশ~৭৭~৫গ্রাম
শক্তি~১০৩~৪১৩কিলোক্যালরি
প্রোটিন (আমিষ)~১৬.২~৬৪.৮গ্রাম
চর্বি~৪~১৭গ্রাম
ক্যালসিয়াম~৬৯২ (১৯৮ – ১৩৬০ এর মধ্যে)~৩৫৯০মিলিগ্রাম
ফসফরাসতথ্য নেই~২৩৪২মিলিগ্রাম
আয়রন (লৌহ)~০.৯১ (০.৪৬ – ১.৯৭ এর মধ্যে)তথ্য নেইমিলিগ্রাম
জিংক~৪.৫১ (২.৭২ – ৬.৬২ এর মধ্যে)তথ্য নেইমিলিগ্রাম
ভিটামিন এ~৯১.২ (৩১.১ – ২৬০.১ এর মধ্যে)তথ্য নেইমাইক্রোগ্রাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড~০.৩৪তথ্য নেইগ্রাম
কপারতথ্য নেই~০.৫১মিলিগ্রাম
সেলেনিয়াম~৩৯.১ (১৬.৫ – ১০২.৮ এর মধ্যে)তথ্য নেইমাইক্রোগ্রাম

চেলা মাছের উপকারিতা:

চেলা মাছের উপকারিতা
চেলা মাছ

চেলা মাছ ছোট আকারের হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিচে চেলা মাছের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

১. প্রোটিনের উৎস: চেলা মাছে উচ্চ মানের প্রোটিন থাকে, যা শরীরের বৃদ্ধি, পেশী গঠন এবং কোষ কলার মেরামতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

২. হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায়: ছোট মাছ হওয়ায় চেলাকে সাধারণত কাঁটাসহ খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পাওয়া যায়, যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে এবং তাদের সঠিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের জন্য এটি খুব উপকারী।

৩. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: চেলা মাছে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।

৪. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ: এই মাছে আয়রন বা লৌহ উপাদান বিদ্যমান, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: চেলা মাছে থাকা জিংক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

৬. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ছোট মাছে উপকারী ফ্যাট বা তেল, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে পারে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৭. সহজে হজমযোগ্য: ছোট মাছ হওয়ায় চেলা মাছ relatively সহজে হজম হয়।

৮. পুষ্টির সহজলভ্যতা: সহজলভ্য এবং তুলনামূলকভাবে কম দামের হওয়ায় চেলা মাছ সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

৯. খনিজ লবণের উৎস: তাজা মাছের তুলনায় শুঁটকি চেলাতে খনিজ লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

মাষকলাই ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

১০. শারীরিক গঠনে সহায়ক: বাড়ন্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

এই সকল কারণে চেলা মাছকে একটি পুষ্টিকর এবং উপকারী খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চেলা মাছের রেসিপি:

১. চেলা মাছের চচ্চড়ি:

এটি চেলা মাছের একটি খুবই প্রচলিত এবং সহজ রেসিপি। বিভিন্ন সবজির (যেমন আলু, বেগুন, পেঁয়াজ কলি, পুঁইশাক ইত্যাদি) সাথে চেলা মাছ মিশিয়ে এই চচ্চড়ি তৈরি করা হয়। এতে সাধারণত পেঁয়াজ কুঁচি, রসুন কুঁচি বা বাটা, আদা বাটা (সামান্য), হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, কাঁচা মরিচ এবং তেল ব্যবহার করা হয়। সবজি ও মাছকে মসলার সাথে মাখিয়ে অল্প আঁচে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং কম জল দিয়ে রান্না করা হয় যাতে এটি মাখা মাখা হয়। এটি গরম ভাতের সাথে খেতে খুবই সুস্বাদু লাগে।

চেলা মাছের  ঝোল

২. চেলা মাছের ঝাল বা তেল ঝাল:

এটিও একটি জনপ্রিয় রেসিপি যেখানে চেলা মাছকে মশলার ঝোলে রান্না করা হয়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে গুঁড়ো এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে কষিয়ে জল দিয়ে ঝোল তৈরি করা হয় এবং তাতে মাছ ছেড়ে রান্না করা হয়। ঝোল কিছুটা ঘন হয়ে এলে তেল উপরে উঠে আসে, যা এই রান্নার একটি বৈশিষ্ট্য। সরষে বাটা দিয়েও এই ঝাল রান্না করা যায়, যা এর স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়।

৩. সরষে বাটা দিয়ে চেলা মাছ:

এই পদ্ধতিতে চেলা মাছকে সরষে বাটা, কাঁচা মরিচ এবং সামান্য হলুদ ও লবণ দিয়ে মেখে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া হয়। এরপর তেলে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে মেখে রাখা মাছ দিয়ে অল্প আঁচে বা সামান্য জল দিয়ে মাখা মাখা করে রান্না করা হয়। সরষের ঝাঁঝালো স্বাদ এই মাছের স্বাদকে অন্য মাত্রা দেয়।

৪. চেলা মাছের শুঁটকি:

চেলা মাছকে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয় এবং এই শুঁটকি দিয়েও নানা ধরনের পদ রান্না হয়। শুঁটকি চেলা সাধারণত ভুনা বা ভর্তা করে খাওয়া হয়। পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ একটু বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে এই শুঁটকি ভুনা করা হয়। লাউশাক বা বেগুন দিয়েও চেলা মাছের শুঁটকির চচ্চড়ি বা ভুনা রান্না করা হয়, যা বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।

এই রেসিপিগুলি সাধারণত খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন হয় না এবং তুলনামূলকভাবে কম সময়ে তৈরি করা যায়। চেলা মাছের এই ধরনের সাধারণ রান্নাতেই এর আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

সম্পর্কিত:

আখরোট কি? জেনেনিন আখরোটের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

September 12, 2024

কাঁকরোলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। কাঁকরোল রেসিপি, চাষ পদ্ধতি।

September 20, 2023

বাগদা চিংড়ির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

May 21, 2024

জামরুলের উপকারিতা ও অপকারিতা। জামরুল কেন খাবেন ?

July 26, 2023

মুলো শাক:মুলো শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

November 5, 2024

কলই শাক কি? কলই শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

November 6, 2024

কচুর কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে? কচু খেলে কি কি উপকার ও অপকার হতে পারে?

September 2, 2023

মধুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। মধু কেন খাবেন?

August 31, 2023

কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 12, 2023

সজনে ডাটার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

September 4, 2023
error: Content is protected !!