Skip to content
Home » MT Articles » মাগুর মাছ: বাঙালির প্রিয় খাবার। মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

মাগুর মাছ: বাঙালির প্রিয় খাবার। মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

মাগুর-মাছের-বৈশিষ্ঠ

বাংলাদেশের নদী-নালায় পাওয়া মাগুর মাছ বাঙালির রান্নাঘরে একটি পরিচিত নাম। এর সুস্বাদু স্বাদ ও পুষ্টিকর গুণের জন্য এটি অনেকেরই প্রিয়। আসুন মাগুর মাছ সম্পর্কে ও মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

মাগুর মাছের পরিচয়:

মাগুর মাছের বৈজ্ঞানিক নাম এবং ইংরেজি নাম হল:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Clarias batrachus
  • ইংরেজি নাম: Walking catfish

কেন মাগুর মাছকে Walking catfish বলা হয়?

মাগুর মাছের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে, সেটি হলো এরা জলে থাকার পাশাপাশি জমিতেও কিছু দূরত্ব পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। এই কারণেই এদের ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে “Walking catfish“।

আরো কিছু তথ্য:

  • মাগুর মাছ Clariidae পরিবারের Clarias গণের একটি স্বাদুপানির মাছ।
  • এরা সাধারণত ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
  • মাগুর মাছের গায়ে কোন আঁশ থাকেনা।
  • এরা অস্থিময়, মাথা অবনত এবং দুটি খাঁজ বিদ্যমান।
  • পিঠের পাখনা লম্বা এবং চার জোড়া শুড় আছে।
  • মাথা চ্যাপ্টা, মুখ প্রশস্ত, গায়ের রং লালচে বাদামী বা ধূসর কালো রংয়ের।

মাগুর মাছের বৈশিষ্ট্য:

এই মাছের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অন্যান্য মাছ থেকে আলাদা করে।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য:

  • দেহ: লম্বাটে এবং সামান্য চ্যাপ্টা।
  • মাথা: বড় এবং চোখ ছোট।
  • রং: সাধারণত ধূসর বা কালো হলেও পরিবেশ অনুযায়ী রং পরিবর্তন হতে পারে।
  • বিশেষ চিহ্ন: মুখে দুটি দীর্ঘ চোঁচা থাকে, যা খাবার ধরতে সাহায্য করে।
  • পাখনা: পৃষ্টদেশে ও পায়ুতে বড় বড় পাখনা থাকে।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:

  • জীবনধারণ: এই মাছ সাধারণত নদীর তলদেশে বা পুকুরের তলদেশে বাস করে। এরা মূলত রাতের বেলা সক্রিয় হয়।
  • খাদ্য: এরা সর্বভুক, অর্থাৎ ছোট মাছ, পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদি সব কিছুই খায়।
  • শ্বাসক্রিয়া: এই মাছ ফুলকার সাহায্যে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দিয়ে বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এই কারণে এরা জলের বাইরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
  • প্রজনন: বর্ষা মৌসুমে মাগুর মাছ ডিম পাড়ে।

মাগুর মাছের প্রকারভেদ:

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকারের মাগুর মাছ পাওয়া যায়, যেমন:

  • দেশি মাগুর: স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
  • আফ্রিকান মাগুর: আকারে বড় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • পাঙ্গাস: আকারে ছোট এবং দামে সস্তা।

মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রাম):

মাগুর মাছ বাংলাদেশীদের খাদ্যতালিকায় একটি জনপ্রিয় মাছ। এর সুস্বাদু স্বাদের পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। আসুন জেনে নিই প্রতি ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে কতটুকু পুষ্টিগুণ রয়েছে:

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালোরি৮৬ ক্যালোরি
প্রোটিন১৫ গ্রাম
চর্বিনগণ্য
ক্যালসিয়াম২১০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস২৯০ মিলিগ্রাম
আয়রন০.৭ মিলিগ্রাম

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান:

  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

মাগুর মাছের উপকারিতা:

মাগুর মাছের উপকারিতা

মাগুর মাছ শুধু বাঙালির রান্নাঘরেই নয়, সারা বিশ্বের অনেকের কাছেই একটি জনপ্রিয় খাবার। এর সুস্বাদু স্বাদের পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। আসুন জেনে নিই মাগুর মাছ খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা:

শরীর গঠন ও মেরামত:

  • প্রোটিনের খনি: মাগুর মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ গঠন ও মেরামতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মাংসপেশি বৃদ্ধি: এটি মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শারীরিক শক্তি বাড়ায়।
  • বৃদ্ধি ও উন্নয়ন: শিশুদের বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি এবং মাগুর মাছ এই প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে।

হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য:

  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস: মাগুর মাছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
  • দাঁতের ক্ষয় রোধ: এটি দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

রক্তের স্বাস্থ্য:

  • আয়রন: মাগুর মাছে আয়রন থাকে, যা শরীরে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে এবং রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে।

হৃদরোগ প্রতিরোধ:

  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: মাগুর মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

অন্যান্য উপকারিতা:

  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: মাগুর মাছে উপস্থিত ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মাগুর মাছে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য: মাগুর মাছ সহজে হজম হয় এবং পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুন

টেংরা মাছ: টেংরা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

মাগুর মাছ খাওয়ার সময় সতর্কতা

মাগুর মাছ বাঙালির খাবারের তালিকায় একটি জনপ্রিয় মাছ। এর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি সুস্বাদু স্বাদের কারণে এটি অনেকেরই প্রিয়। তবে মাগুর মাছ খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

কেন সতর্কতা জরুরি?

  • হাইব্রিড মাগুর: বাজারে অনেক সময় হাইব্রিড মাগুর পাওয়া যায়। এই মাছগুলোকে দ্রুত বড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • দূষিত পানি: যে পানিতে মাছ চাষ করা হয়, সেটি যদি দূষিত হয়, তাহলে মাছের মাংসেও বিভিন্ন ধরনের দূষণকারী উপাদান জমা হতে পারে।
  • পারদ: কিছু মাছে পারদের মাত্রা বেশি থাকতে পারে। অতিরিক্ত পারদ শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

মাগুর মাছ কেনার সময় সতর্কতা:

  • আকার: বড় আকারের মাগুর মাছ কেনার পরিবর্তে ছোট আকারের মাছ কিনুন। কারণ বড় আকারের মাছগুলোতে হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা বেশি থাকতে পারে।
  • গন্ধ: তাজা মাছের গন্ধ মিষ্টি হবে। কোনো ধরনের অদ্ভুত গন্ধ পেলে সেই মাছ কিনবেন না।
  • চোখ: তাজা মাছের চোখ উজ্জ্বল ও ভরাট থাকবে।
  • গিল: গিলগন্ধহীন এবং লালচে রঙের হওয়া উচিত।
  • মাংস: মাংস স্থিতিস্থাপক এবং কোনো দাগ ছাড়া হওয়া উচিত।

কারা মাগুর মাছ খাওয়া এড়িয়ে চলবেন?

  • কিডনি রোগী: কিডনি রোগীদের জন্য মাছের প্রোটিন খুব বেশি হতে পারে।
  • অ্যালার্জি: মাছের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে মাগুর মাছ এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ডাক্তারের পরামর্শ: কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাছ খাওয়া উচিত।

নিরাপদে মাগুর মাছ খাওয়ার উপায়:

  • ভালো করে ধুয়ে নিন: মাছ কেনার পর ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • আন্তড়াল বের করে ফেলুন: মাছের আন্তড়াল বের করে ফেলুন।
  • ভালো করে রান্না করুন: মাছকে ভালো করে রান্না করুন যাতে কোনো ধরনের জীবাণু বেঁচে না থাকে।
  • বিভিন্ন ধরনের মাছ খান: শুধু মাগুর মাছে নির্ভর না করে বিভিন্ন ধরনের মাছ খান।

মাগুর মাছ খাওয়ার বিভিন্ন উপায়

এই মাছ খাওয়ার অনেক উপায় আছে! বাঙালির রান্নাঘরে মাগুর মাছের ব্যবহার অসীম। এর সুস্বাদু স্বাদের কারণে একে নানাভাবে রান্না করে খাওয়া হয়। আসুন কিছু জনপ্রিয় রান্নার রেসিপি জেনে নেওয়া যাক:

মাগুর মাছের জনপ্রিয় রান্না:

  • মাগুর মাছের কড়াই: বাঙালির প্রিয় রান্নার মধ্যে মাগুর মাছের কড়াই অন্যতম। সরষে, পোস্ত বা নারকেলের বাটা দিয়ে তৈরি এই কড়াই গরম ভাতের সাথে অসাধারণ জোড়া।
  • মাগুর মাছের ভাপা: স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য এই মাছ ভাপা একটি চমৎকার বিকল্প। সরল উপকরণ ও রান্নার পদ্ধতির কারণে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
  • মাগুর মাছের ঝাল: তেতুলের স্বাদে এই রান্নাটি অনেকেরই পছন্দ।
  • মাগুর মাছের পাতুরি: ভাপা মাছের একটি ভিন্ন রূপ। সরষে, পোস্ত বা নারকেলের বাটা দিয়ে তৈরি এই পাতুরি খুবই সুস্বাদু।
  • মাগুর মাছের মসলাই: মসলা দিয়ে তৈরি এই রান্নাটি খুবই সুস্বাদু এবং গরম ভাতের সাথে খেতে অসাধারণ।
  • মাগুর মাছের তেলে ভাজা: সহজ ও দ্রুত তৈরি করা যায় এটি।
  • মাগুর মাছের স্যুপ: শীতকালে গরম গরম স্যুপ খেতে অনেক ভালো লাগে।

মাগুর মাছ রান্নার টিপস:

  • মাছ কেনার সময়: তাজা মাছ কিনুন। মাছের চোখ উজ্জ্বল, গিলগন্ধহীন এবং মাংস স্থিতিস্থাপক হওয়া উচিত।
  • পরিষ্কার করা: মাছ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। আন্তড়াল বের করে ফেলুন।
  • মশলা: মাছের স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যবহার করতে পারেন।
  • তেল: অল্প পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন।
  • সময়: মাছকে ভালো করে রান্না করুন যাতে কোনো জীবাণু না থাকে।

This article is written with the help of Gemini

সম্পর্কিত:

আম খাওয়ার উপকারিতা ও আমের পুষ্টিগুণ।

July 17, 2023

চেলা মাছ: চেলা মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, বৈশিষ্ট্য ও রেসিপি।

April 23, 2025

আটা কি? আটা ও ময়দার মধ্যে পার্থক্য কি? আটার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা কি কি?

September 1, 2024

স্ট্রবেরি: শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর একটি ফল

June 29, 2024

বেদানার উপকারিতা ও অপকারিতা । শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে অতুলনীয় বেদানা।

August 2, 2023

কদবেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। কদবেল কেন খাবেন?

August 28, 2023

আমলকীর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। চুলের যত্নে আমলকী।

October 14, 2023

চিচিঙ্গা কি? চিঙ্গার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

October 3, 2024

লটকন ফল কেন এত জনপ্রিয়? জঙ্গলের এই ফলের রহস্য কী?

July 25, 2024

আঙ্গুর ফল এর ১২ টি অসাধারণ উপকারিতা।

August 13, 2023
error: Content is protected !!