Skip to content
Home » MT Articles » কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

কাঁঠালের বিচি

কাঁঠালের বিচি

কাঁঠালের বিচির রঙ বাদামী রঙের, ডিম্বাকৃতির এবং প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বা। এগুলো শক্ত খোসার ভেতর নরম, সাদা বীজ থাকে। কাঁঠালের বিচি খাওয়া যায় এবং এগুলোতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।

কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ:

কাঁঠালের বিচির পুষ্টি উপাদান টেবিল (প্রতি ১০০ গ্রাম)
পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
শক্তি৯৮ ক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট৩৮.৪ গ্রাম
চর্বি০.৪ গ্রাম
প্রোটিন৬.৬ গ্রাম
ফাইবার১.৫ গ্রাম
আয়রন১.২ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম০.০৫ – ০.৫৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস০.১৩ – ০.২৩ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম৪.০৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ৮০ আইইউ
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন)০.১৫ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন১.১ মিলিগ্রাম

উল্লেখ্য:

  • পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিচির জাত, কাটার পদ্ধতি এবং রান্নার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
  • এই টেবিলটি কেবলমাত্র একটি গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
কাঁঠালের বিচির পুষ্টিগুণ

কাঁঠালের বিচির উপকারিতা:

পুষ্টিগুণ:

  • প্রোটিন: কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। আসলে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে প্রায় ২১ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা গরুর মাংসের সমান। এটি নিরামিষভোজী এবং শাকাভোজীদের জন্য প্রোটিনের একটি ভাল উৎস করে তোলে।
  • ফাইবার: কাঁঠালের বিচিতে ফাইবারও প্রচুর পরিমাণে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে প্রায় ১০ গ্রাম ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং এটি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • আয়রন: কাঁঠালের বিচি আয়রনের একটি ভাল উৎস। আয়রন লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে যা অক্সিজেনকে শরীরে বহন করে।
  • ম্যাগনেসিয়াম: কাঁঠালের বিচি ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস। ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং স্নায়ু কার্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • ম্যাঙ্গানিজ: কাঁঠালের বিচি ম্যাঙ্গানিজের একটি ভাল উৎস। ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরোও পড়ুন

কচুর লতির পুষ্টিউপাদান, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি।

কাঁঠালের বিচির স্বাস্থ্য উপকারিতা:

  • হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে: কাঁঠালের বিচিতে থাকা ফাইবার হজম স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ফাইবার মলকে নরম করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি কোলনের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: কাঁঠালের বিচিতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফাইবার শরীরে শর্করার শোষণ ধীর করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি এবং পতনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কাঁঠালের বিচিতে থাকা ফাইবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার LDL (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ধমনীতে প্লাক তৈরি হতে পারে এবং হৃদরোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  • ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে: কাঁঠালের বিচিতে ভিটামিন এ এবং ই থাকে, যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের কোষগুলিকে পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন ই ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে: কাঁঠালের বিচি ক্যালোরিতে কম এবং ফাইবারে বেশি, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।

কাঁঠালের বিচির অপকারিতা:

কাঁঠালের বিচির কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা:

যদিও কাঁঠালের বিচি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও বিবেচনা করা উচিত:

১. হজমে সমস্যা: কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কিছু লোকের হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত নন। পেট ফোলাভাব, গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে।

২. অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু লোকের কাঁঠালের বিচির প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিসও হতে পারে।

৩. ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া: কাঁঠালের বিচি কিছু ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, বিশেষ করে রক্ত ​​পাতলাকারক এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ। আপনি যদি কোনও ওষুধ খান তবে কাঁঠালের বিচি খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ছোট বাচ্চাদের জন্য ঝুঁকি: ছোট বাচ্চাদের কাঁঠালের বিচি খাওয়ার সময় ঘুটনিতে ঝুঁকি থাকে কারণ এগুলি ছোট এবং গিলে ফেলা সহজ। তাদের তত্ত্বাবধানে খাওয়ানো উচিত।

৫. পরিমাণে খাওয়া: যেকোনো খাবারের মতো, পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত খাওয়া উপরে উল্লিখিত সম্ভাব্য অপকারিতাগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কাঁঠালের বিচি খাওয়ার আগে, আপনার যদি কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা আপনি কোনও ওষুধ খান তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখবেন: এই তথ্যগুলি কেবলমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে এবং কোনও চিকিৎসা পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত করা উচিত নয়। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকলে, অনুগ্রহ করে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।

ভাজা কাঁঠালের বিচি

কাঁঠালের বিচি খাওয়ার নিয়ম:

পরিমাণ:

  • প্রতিদিন 10-15 টি কাঁঠালের বিচি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • আপনি আপনার স্বাস্থ্য এবং সহনশীলতার উপর নির্ভর করে এই পরিমাণটি ক্রমশ বাড়াতে পারেন।
  • অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ এটি হজমে সমস্যা, গ্যাস এবং ফোলাভাবের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

প্রস্তুত প্রণালী:

  • ভেজে:
    • এটি কাঁঠালের বিচি খাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়।
    • তেল গরম করে, কাঁঠালের বিচি হালকা বাদামী করে ভেজে নিন।
    • লবণ এবং মরিচ দিয়ে স্বাদ অনুযায়ী মশলা করুন।
  • সেদ্ধ:
    • পানিতে কাঁঠালের বিচি নরম না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন।
    • ঝোল ছেঁকে ফেলুন এবং লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ কুচি এবং ধনেপাতা দিয়ে মসলা করুন।
  • শুকনো:
    • রোদে শুকিয়ে কাঁঠালের বিচি বাদামের মতো খেতে পারেন।
    • এটি দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়।
  • গুঁড়া:
    • শুকনো কাঁঠালের বিচি ব্লেন্ড করে গুঁড়ো তৈরি করুন।
    • এই গুঁড়া স্মুদি, ডেজার্ট এবং অন্যান্য খাবারে মিশিয়ে খেতে পারেন।

কাঁঠালের বিচি রেসিপি:

১. ভাজা কাঁঠালের বিচি:

উপকরণ:

  • কাঁঠালের বিচি – ১ কাপ
  • তেল – পরিমাণমতো
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • মরিচ গুঁড়া – স্বাদ অনুযায়ী
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
  • জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

প্রণালী:

  1. কাঁঠালের বিচি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  2. একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে কাঁঠালের বিচি হালকা বাদামী করে ভেজে নিন।
  3. ভাজা হয়ে গেলে লবণ, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া এবং জিরা গুঁড়া (ঐচ্ছিক) দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  4. গরম গরম পরিবেশন করুন।
বিচি

২. সেদ্ধ কাঁঠালের বিচি:

উপকরণ:

  • কাঁঠালের বিচি – ১ কাপ
  • পানি – পরিমাণমতো
  • লবণ – স্বাদ অনুযায়ী
  • পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক)
  • ধনেপাতা – ১ টেবিল চামচ (কুচি করা) (ঐচ্ছিক)

প্রণালী:

  1. কাঁঠালের বিচি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  2. একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে লবণ দিন।
  3. লবণজল ফুটে উঠলে তাতে কাঁঠালের বিচি দিয়ে ঢেকে দিন।
  4. কাঁঠালের বিচি নরম না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন।
  5. ঝোল ছেঁকে ফেলুন এবং পেঁয়াজ কুচি এবং ধনেপাতা দিয়ে (ঐচ্ছিক) মিশিয়ে নিন।
  6. ভাত, রুটি, খিচুড়ি ইত্যাদির সাথে পরিবেশন করুন।

৩. কাঁঠালের বিচির গুঁড়ো:

উপকরণ:

  • শুকনো কাঁঠালের বিচি – পরিমাণমতো

প্রণালী:

  1. শুকনো কাঁঠালের বিচি ব্লেন্ড করে গুঁড়ো তৈরি করুন।
  2. এই গুঁড়া স্মুদি, ডেজার্ট এবং অন্যান্য খাবারে মিশিয়ে খেতে পারেন।

৪) কাঁঠালের বিচি ভর্তা রেসিপি:

উপকরণ:

  • সেদ্ধ কাঁঠালের বিচি – ১ কাপ
  • পেঁয়াজ কুচি – ১/২ কাপ
  • রসুন কুচি – ১ টেবিল চামচ
  • আদা কুচি – ১ টেবিল চামচ
  • ধনেপাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
  • লাল মরিচ গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
  • জিরা গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
  • ধনে গুঁড়া – ১/৪ চা চামচ
  • তেল – ২ টেবিল চামচ
কাঁঠালের বিচি ভর্তা রেসিপি

প্রণালী:

  1. কাঁঠালের বিচি সেদ্ধ করুন:
    • একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে কাঁঠালের বিচি দিয়ে 10-15 মিনিট নরম না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন।
    • পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
  2. ভাজুন:
    • একটি কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি বাদামী করে ভেজে নিন।
    • রসুন, আদা, हरी मिर्च এবং লবণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন।
  3. মশলা করুন:
    • হলুদ গুঁড়া, লাল মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া এবং ধনে গুঁড়া দিয়ে মসলা করুন।
  4. কাঁঠালের বিচি মিশিয়ে নিন:
    • সেদ্ধ কাঁঠালের বিচি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  5. সিদ্ধান্ত:
    • ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

টিপস:

  • আপনি চাইলে কাঁঠালের বিচি ভেজেও ব্যবহার করতে পারেন।
  • ভর্তায় আরও স্বাদ যোগ করার জন্য আপনি কাঁচা মরিচ, টমেটো, বা পেঁপেও ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি যদি ঝাল পছন্দ করেন তবে হলুদ মরিচ গুঁড়া বা কাঁচা মরিচের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
  • কাঁঠালের বিচি ভর্তা 3-4 দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়।

পরিবেশন:

কাঁঠালের বিচি ভর্তা ভাত, রুটি, পরোটা, বা লুচির সাথে পরিবেশন করা । এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর नाश्ता বা হালকা খাবার হতে পারে।

This article is written with the help of Gemini

সম্পর্কিত:

চিনা বাদামের পুষ্টিগুণ। ভিটামিন ই এর অসাধারণ উৎস চিনা বাদাম।

November 5, 2024

শিং মাছের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

May 11, 2024

করলা কি? করলার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

December 9, 2023

কাঠলিচু কি? জেনেনিন কাঠলিচুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

July 15, 2024

মাল্টার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। মাল্টা কেন খাবেন?

September 23, 2023

অড়হর ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

April 21, 2024

মৌশিম বা কলা শিম । অপরিচিত! কিন্তু স্বুসাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি।

November 11, 2024

বহেরা কি? জেনেনিন বহেরার অভাবনীয় ভেষজ গুণ সম্পর্কে।

March 12, 2024

মসুর ডালের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা ও রান্না প্রণালী।

September 18, 2023

খেজুরের রস কি? খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

January 21, 2024
error: Content is protected !!