শরিফা বা আতা ফল
শরিফা ফল হল অ্যানোনেসি পরিবারভুক্ত এক ধরনের যৌগিক ফল। এটি আতা এবং নোনা নামেও পরিচিত। শরিফা বা আতা ফল এর ভিতরে থাকে ছোট ছোট কোষ। প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। পাকা ফলের বীজ কালো এবং কাঁচা ফলের বীজ সাদা। শরিফা ফলের আকার সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি হয়। এর রঙ সাধারণত সবুজ, হলুদ বা বাদামী হতে পারে। পাকা শরিফা ফলের রঙ গাঢ় হলুদ বা কমলা হয়। শরিফা ফলের গন্ধ মিষ্টি ও মনোরম।
শরিফা ফলের স্বাদ মিষ্টি, টক ও ঝাল মিশ্রিত। এই ফলের রসালো অংশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস রয়েছে। শরিফা ফলের পুষ্টিগুণের কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
শরিফা ফলের পুষ্টিগুণ:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ (১০০ গ্রাম) |
ক্যালোরি | ৭৯ |
প্রোটিন | ১.৩ গ্রাম |
শর্করা | ২৩.২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
খাদ্যআঁশ | ২.৩ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৩৩.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ | ০.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ২৯২ আইইউ |
ক্যালসিয়াম | ১০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ০.৭ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫০ মিলিগ্রাম |
শরিফা ফলের উপকারিতা:

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
শরিফা ফল ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
২) হজমশক্তি বাড়ায়:
আরোও পড়ুন
আনারসের পুষ্টিগুণ। আনারস (Pineapple) কেন খাবেন ?
শরিফা ফল ফাইবারের একটি ভালো উৎস। ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৩) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
শরিফা ফলের রসালো অংশে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:
শরিফা ফলের রসালো অংশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫) হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
শরিফা ফল পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
৬) চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
শরিফা ফল ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
শরিফা বা আতা ফলের অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

- শরিফা ফলের বীজ বিষাক্ত। কাঁচা বা পাকা শরিফা ফলের বীজ খেলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই শরিফা ফল খাওয়ার সময় বীজ ফেলে দিতে হবে।
- শরিফা ফলের অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই শরিফা ফল পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- শরিফা ফলের অ্যালার্জি হতে পারে। শরিফা ফলের কোন উপাদানের প্রতি কারো অ্যালার্জি থাকলে শরিফা ফল খেলে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। তাই শরিফা ফল খাওয়ার আগে অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত করা উচিত।
শরিফা ফল খাওয়ার নিয়ম:
শরিফা ফল খাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:
- সরাসরি খাওয়া: শরিফা ফল পাকা অবস্থায় সরাসরি খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে শরিফা ফলের খোসা ছাড়িয়ে বীজ ফেলে দিয়ে নরম ও রসালো অংশ খেতে হবে।
- জুস করে খাওয়া: শরিফা ফলের জুস খুবই সুস্বাদু। শরিফা ফলের জুস তৈরি করতে শরিফা ফলের খোসা ছাড়িয়ে বীজ ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ড করা মিশ্রণটি ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে শরিফা ফলের জুস।
- সালাদে ব্যবহার করা: শরিফা ফল সালাদের একটি জনপ্রিয় উপাদান। শরিফা ফলের সালাদ তৈরি করতে শরিফা ফলের খোসা ছাড়িয়ে বীজ ফেলে দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর অন্যান্য সালাদ উপকরণ, যেমন টমেটো, শসা, গাজর, লেবুর রস ইত্যাদি দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে শরিফা ফলের সালাদ।
- মিষ্টি তৈরি করা: শরিফা ফল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করা যায়। যেমন, শরিফা ফলের চকোলেট, শরিফা ফলের জেলি, শরিফা ফলের আইসক্রিম ইত্যাদি।