ফুলকপি
ফুলকপি ব্রাসিকেসি পরিবারের একটি বার্ষিক ফসল। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি যা রান্না করে কিংবা কাঁচা যেকোনোভাবে খাওয়া যায়। ফুলকপির পুষ্পাক্ষ অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা ফেলে দেওয়া হয়।ফুলকপির বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea var. botrytis। এটি ব্রাসিকা অলেরাসিয়া প্রজাতির সবজিগুলোর মধ্যে একটি। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।
ফুলকপির পুষ্টিগুণ:
ফুলকপি একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। একটি মাঝারি আকারের ফুলকপিতে (১০০ গ্রাম) নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
ক্যালোরি | ২৫ |
কার্বোহাইড্রেট | ৪.৯৭ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৯২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২৮ গ্রাম |
আঁশ | ২ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬৮ মিলিগ্রাম (১০০% দৈনিক চাহিদা) |
ভিটামিন কে | ১৩৩ মাইক্রোগ্রাম (১৪৮% দৈনিক চাহিদা) |
ফোলেট | ৬৭ মাইক্রোগ্রাম (১৭% দৈনিক চাহিদা) |
পটাসিয়াম | ১৪১ মিলিগ্রাম (৪% দৈনিক চাহিদা) |
ম্যাগনেসিয়াম | ২১ মিলিগ্রাম (৫% দৈনিক চাহিদা) |
ফসফরাস | ৪৩ মিলিগ্রাম (৫% দৈনিক চাহিদা) |
আয়রন | ০.৫ মিলিগ্রাম (৩% দৈনিক চাহিদা) |
ফুলকপির উপকারিতা:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
ফুলকপিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় ও দাঁতের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে:
ফুলকপিতে আয়রন রয়েছে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:
ফুলকপিতে ফাইবার রয়েছে, যা হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
আরোও পড়ুন
আখের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা। আখের রস কেন খাবেন?
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
ফুলকপিতে আইসোথায়োসায়ানেটস নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে:
ফুলকপিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি। তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:
ফুলকপিতে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
ফুলকপির অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

ফুলকপি একটি নিরাপদ খাবার যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ফুলকপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ফুলকপির কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা নিম্নরূপ:
- গ্যাস ও ফোলাভাব: ফুলকপিতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ করলে গ্যাস ও ফোলাভাব হতে পারে।
- হজম সমস্যা: ফুলকপিতে সালফার যৌগ রয়েছে যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হজম সমস্যা হতে পারে।
- থাইরয়েড সমস্যা: ফুলকপিতে গ্লুকোজাইনোলেটস নামক একটি যৌগ রয়েছে যা থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই থাইরয়েড সমস্যা থাকলে ফুলকপি খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি: ফুলকপিতে purines নামক একটি যৌগ রয়েছে যা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি করতে পারে। তাই ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে ফুলকপি খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
সাধারণত, ফুলকপি একটি নিরাপদ খাবার যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। তবে, উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলোর মধ্যে কোনটি যদি আপনার থাকে তাহলে ফুলকপি খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।